আইটি, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তথা ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স গ্রেজুয়েট যারা গভারমেন্ট,স্বায়ত্তশাসিত,পাবলিক লিমিটেড তথা প্রতিষ্ঠিত সফটওয়ার ফার্মে যারা চাকুরি খুজছেন তাদের জন্য আমরা যারা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন পোস্টে কমরত তাদের কিছু দায়িত্ব থেকেই যায়, আমাদের জুনিয়রদের গাইড করার ব্যাপারে। আমরা মনে প্রানে বিশ্বাস করি যে, আমাদের জুনিয়রা আমাদের চাইতে অনেক অনেকগুন পারদর্শী তারপরও যদি এই গাইডলাইন গুলো হয়ত আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে দিবে।

মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস নিয়ে কিছু প্রশ্ন

মুক্তিযুদ্ধ কত দিন ধরে হয়েছিল?

দীর্ঘ ৯ মাস ধরে মানে প্রায় ২৭০ দিনের মত, ২৬ মার্চ শুরু হয়।শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর।

 

স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম চলচ্চিত্র কোনটি? সংক্ষেপে এই চলচ্চিত্রটির কাহিনী কেউ জানাতে পারেন কি?

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হল ওরা ১১ জন। চাষী নজরুল পরিচালিত এই ছবিটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র যা মুক্তি পায় ১৯৭২ সালের ১১ই আগষ্ট। দীর্ঘ ৯মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামকে দেশী বিদেশী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরাই ছিল এই ছবির মূল উদ্দেশ্য। যুদ্ধাফেরত দুই তরুন খসরু ও মাসুদ পারভেজ মুক্তিযুদ্ধের কঠিন সময়টি সবার সামনে তুলে ধরার একটি মাধ্যম। আর তাদের সাথে যোগ দেন চাষী নজরুল ইসলাম। ৩ জনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হল এই চলচ্চিত্রটি। বলে রাখা ভাল, এখানে কোন পেশাদার অভিনেতারা মূখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন নি, যারা চলচ্চিত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে অভিনয় করেছেন তারা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এই ছবিতে ব্যবহার করা সব আমর্স ও গোলাবারুদ ছিল সত্যিকারের। পরিচালক খুব সতর্কতার সাথে এই সব ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন।

সংক্ষেপে চলচ্চিত্রটির কাহিনীঃ- মূলত এই ছবিটি গড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি ১১জন বিশিষ্ট গিরিলা বাহিনীকে কেন্দ্র করে। ২৫ মার্চ রাতের পর পাকিস্তানিদের সেনাদের বিরুদ্ধে অনেক গুলো সফল অভিযান পরিচালনা করে এই বাহিনীটি। এই বাহিনীর প্রধান ছিলেন কামরুল ইসলাম খসরু। যিনি চলচ্চিত্রে ও বাস্তবে একই নামে পরিচিত।

খসরু ও তার বোন মিতা (শাবানা) ঢাকা মামাবাড়ীতে থেকে লেখাপড়া করে, প্রতিবেশী শীলার সাথে খসরুর বিয়ে ঠিক হয়। অন্যদিকে মেডিকেলে পড়ুয়া ছাত্রী মিতার সাথে শীলার ভাই পারভেজ (রাজ্জাক) এর সম্পর্ক গড়ে উঠে। সব কিছু ঠিকই চলছিল, কিন্তু এরি মাঝে শুরু হলো পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার আর শুরু হলো যুদ্ধ। খসরু সবকিছু ফেলে যুদ্ধে গেল। যুদ্ধে গিয়ে আরো ১০জন মুক্তিযুদ্ধাকে সাথে নিয়ে গড়ে তোলে গেরিলা বাহিনী ১১ জন। এদিকে পারভেজ মুক্তিবাহিনীদের সাহায্য করায় পাক বাহিনীর হাতে ধরা পরে। শুরু হয় পারভেজের উপর নির্মম অত্যাচার। শেষে পাক বাহিনী পারভেজের কাছ থেকে মুক্তিবাহিনীর কোন তথ্য না বের করতে পারায় তার সামনেই তার মা ও ছোট ভাইকে হত্যা করে আর তার বোন শিলার উপর চলে যৌন নির্যাতন। মিতা বিক্রমপুরে আহত ‍মুক্তিযুদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য যোগ দেয় একটি চিকিৎসক দলের সাথে। তারপর একদিন সেও পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পরে ও নির্যাতনের শিকার হয়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ হয় স্বাধীন। ২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোটা সময় একসাথে খুব সুন্দর আর নিখুতভাবে পরিচালক ক্যামরাবন্দি করতে সক্ষম হন এবং এই ছবিটি খুব জনপ্রিয়তা পায়। 

 

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আপনাকে কিভাবে অনুপ্রাণিত করে ব্যক্তিগত জীবনে?

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আমি বুঝি ৬ দফা দাবি। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে বুঝি শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তলা। এবং, আমি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভীষণ গর্বিত। 

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাকে দিল্লীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শেখায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাকে শেখায় বাংলাদেশকে যারা শোষণ করছে তাদের ঘৃণা করতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাকে প্রচণ্ড রকমের ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় গোঁড়ামি বিরোধী করে তুলেছে (ধর্ম বিরোধি নয়)। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাকে তীব্র ভারত বিদ্বেষী (আমি ভারত বিরোধী নয়, ভারত বিদ্বেষী) করে তুলেছে। বাংলাদেশকে ৪৬ বছর ধরে যে দেশটি শোষণ করছে তাদের বিরদ্ধে কথা বলতে শিখিয়েছে। এভাবেই, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আমার জীবনে ধারন করে থাকি।  


মুক্তিযুদ্ধের নিয়মিত বাহিনী আর অনিয়মিত বাহিনী কী? মুক্তিযুদ্ধ

মুক্তিবাহিনীর "নিয়মিত বাহিনী" গঠন করা হয়েছিল ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (EBR), ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস (পরবর্তীতে বাংলাদেশ রাইফেলস বা BDR), পুলিশ, অন্যান্য আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং সাধারণ জনগন নিয়ে। এই বাহিনী বাংলাদেশব্যাপি ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল এবং নিয়ন্ত্রন ছিলো সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে। যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে নিয়ন্ত্রিত এবং সংঘবদ্ধ আক্রমণের জন্য তিনটি শক্তিশালী বাহিনী গঠন করা হয় - মেজর (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জেড-ফোর্স, মেজর (পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার) খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে কে-ফোর্স এবং মেজর (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল) কে. এম. শফিউল্লাহের নেতৃত্বে এস-ফোর্স.

নিয়মিত বাহিনী গতানুগতিক সম্মুখযুদ্ধে নিয়োজিত ছিলো।

অনিয়মিত বাহিনী, যাকে "গণ বাহিনী" নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে, গঠন করা হয়েছিলো গেরিলা যুদ্ধে প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের নিয়ে। এই বাহিনীর সদস্যরা ছিলো মূলত ছাত্র, কৃষক, শ্রমজীবী এবং রাজনৈতিক কর্মীরা। তাদের প্রাথমিক প্রশিক্ষনের পর বিভিন্ন সেক্টরে বিন্যস্ত করা হয়েছিলো। তাদের মূল দায়িত্ব ছিলো বাংলাদেশের ভেতরে পাকিস্তানী আর্মির বিরুদ্ধে গেরিলা কায়দায় চকিত আক্রমণ চালানো এবং যথাসম্ভব ক্ষতিসাধণ। 

যে লক্ষ্য ও আদর্শকে সামনে রেখে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, সেই লক্ষ্য ও আদর্শ কতটা অর্জিত হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

লক্ষ্য ছিল চারটি গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম-নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদী | দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে ঠিক ই কিন্তু, কিন্তু মূল লক্ষ্য তো অর্জিত হয়নি, আর আদর্শ থেকে আমরা অনেক আগেই সরে এসেছি| জাতি দ্বিধাবিভক্ত, মুক্তিযুদ্ধের ৪৫ বছর পরেও আমরা এক হতে পারিনি।

মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা যুদ্ধ কি ?

গেরিলাদের কার্যপরিধি ঠিক এভাবেই ব্যাখ্যা করেছিলেন ইতিহাসের বিখ্যাত গেরিলা নেতা মাও সে তুং। গেরিলা একটি স্প্যানিশ শব্দ।যার অর্থ হল খুদে যোদ্ধা।গেরিলা শব্দটি মূলত দলছুট বা একক যোদ্ধার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও কখনো কখনো গেরিলারা ছোট ছোট দল গড়ে তোলে।আবার কখনো কখনো গেরিলারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়েও শত্রুপক্ষের প্রশিক্ষিত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। গেরিলারা হল সেসব বেসামরিক যোদ্ধা যারা ভূমি ও ভৌগলিক সুবিধা ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের উপর প্রভাব বিস্তার করে।এদের যুদ্ধ পদ্ধতি হয় অনেকটা হিট এন্ড রানপদ্ধতিতে।গেরিলারা মূলত বিচ্ছিন্ন ভাবে শত্রুপক্ষের উপর আক্রমন পরিচালনা করে, এবং সহজেই শত্রুপক্ষকে বিপর্যস্ত করে তোলে। গেরিলা যুদ্ধ বা যোদ্ধাদের বিকাশ ঘটেছিল মূলত নেপোলিয়নের সময়ে।এবং এর পরবর্তীতে সময়ে প্রায় প্রত্যেকটি যুদ্ধেই গেরিলা যোদ্ধাদের ছিল সরব উপস্থিতি। এরই পরিক্রমাই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও গেরিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।এবং মুক্তিযুদ্ধে এসকল গেরিলা যোদ্ধাদের সফলতাও ছিল রীতিমত কিংবদন্তিতুল্য। ……আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী গেরিলা যোদ্ধাদের দ্বারা পরিচালিত প্রত্যেকটি অপারেশন প্রায় নির্ভুলভাবে সম্পূর্ন হয়েছিল এবং এসকল অপারেশনের সফলতাও ছিল প্রায় ১০০ ভাগ।


 চরমপত্র কি ? মুক্তিযুদ্ধের সময় কেন চরমপত্র পাঠ করা হতো ?

চরমপত্র: - চরমপত্র (ইংরেজি: Chorompotro) হল এম আর আখতার মুকুল রচিত ও উপস্থাপিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। 'চরমপত্র' অনুষ্ঠানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হওয়ার দিন ২৫শে মে থেকে শুরু করে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দিন পর্যন্ত প্রতিদিন প্রচারিত হয়েছে। 'চরমপত্র' অনুষ্ঠানটির নামকরণ করেছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের কর্মী আশফাকুর রহমান খান। 'চরমপত্র' - এর প্রতিটি অধ্যায় রচনা ও পাঠ করেন এম আর আখতার মুকুল। 'চরমপত্র' ছিল ব্যাঙ্গাত্মক ও শ্লেষাত্মক মন্তব্যে ভরপুর একটি অনুষ্ঠান। মানসম্মত রেকর্ডিং স্টুডিওর অভাবে টেপ রেকর্ডারে 'চরমপত্র' রেকর্ডিং করা হতো এবং ৮-১০ মিনিটের এই টেপ নিয়মিতভাবে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের ট্রান্সমিটার থেকে প্রচারিত হতো। 'চরমপত্র' - এর প্রতিটি অনুষ্ঠানের রচনা ও ব্রডকাস্টিং-এর জন্য এম আর আখতার মুকুল এর পারিশ্রমিক নির্ধারিত হয়েছিল ৭ টাকা ২৫ পয়সা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত এই অনুষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা দানের জন্য রচিত ও পরিবেশিত হতো। এই অনুষ্ঠান বাংলাদেশের শত্রু কবলিত এলাকার জনগোষ্ঠী ও ভারতে অবস্থানরত বাঙ্গালী শরণার্থীদের মনোবল বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


স্বাধীনতাযুদ্ধ শেষে পাকবাহিনী আত্মসমর্পনের দলিলে কেন ইন্ডিয়ান অরোরা আর পাকিস্তানি নিয়াজির স্বাক্ষর? বাঙ্গালী কেউ কেন স্বাক্ষর করলেন না?

জেনারেল ইয়াহিয়া জেনারেল মানেকশর নিকট একটি আবেদনে জানিয়েছিলেন যে, "পাকবাহিনী আত্মসমর্পনে প্রস্তুত তবে তাদের শুধু একটি প্রার্থনা যে আত্মসমর্পন গ্রহন করবে ভারতীয় সেনানায়কেরা । কারণ ভারত জেনেভা কনভেনশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । বাংলাদেশ যেহেতু জেনেভা কনভেনশনে সই করেনি তাই বাংলাদেশের জেনেরেলের নিকট আত্মসমর্পন করা সম্ভব নয় ।কারণ মুক্তিবাহিনী যদি প্রতিশোধমূলক হত্যা চালায় তবে আন্তর্জাতিক আইন বা জেনেভা কনভেনশন তাদের রক্ষা করতে পারবে না ।" . পাকিস্তানীরা কেনো মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেনি এটার ব্যাখ্যা দিয়েছেন জেনারেল ওসমানী। ব্যাপারটা এমন যে যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক নীতিমালা আছে যার নাম 'জেনেভা কনভেনশন'। বাংলাদেশ এই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয় বলেই সেই নীতিমালা মানতে মুক্তিবাহিনী বাধ্য ছিলো না। তাই তাদের হত্যা করলে বা তাদের উপর অত্যাচার করলে বলার থাকতো না কিছু। . ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে) আত্মসমর্পন করেছিল যৌথকমান্ডের অন্যতম অধিনায়ক জেনারেল অরোরার কাছে। আত্মসমর্পণের দলিলে জগজিত সিং অরোরা স্বাক্ষর করেন মিত্রবাহিনীর পক্ষে। বাংলাদেশের পক্ষে এই অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করেন মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন (এয়ার ভাইস মার্শাল) একে খন্দকার। আরো উপস্থিত ছিলেন ২ নং সেক্টর (ঢাকা) কমান্ডার এ টি এম হায়দার। . আত্মসমর্পনের দলিলের নীচে স্বাক্ষরের নীচে ইংরেজিতে আরোরার পদবি ছিল- General Officer Commanding in Chief, India and BANGLA DESH Forces in the Eastern Theatre. এ শব্দটুকুর না বুঝার কোন কারণ নেই। এ প্রসঙ্গে জেনারেল ওসমানী বলেন, "আমি উপস্থিত থাকলেও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আমার যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ এই সশস্ত্র যুদ্ধ ভারত-বাংলাদেশের যৌথ কমান্ডের অধীনে হলেও যুদ্ধের অপারেটিং পার্টের পুরো কমান্ডে ছিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান লেফট্যানেন্ট জেনারেল স্যাম মানেকশ। আমি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো নিয়মিত সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান নই। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে জেনারেল মানেকশকে রিপ্রেজেন্ট করেন লে.জে অরোরা। জেনারেল মানেকশ গেলে তার সঙ্গে যাওয়ার প্রশ্ন উঠতো। সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে আমার অবস্থান জেনারেল মানেকশর সমান। সেখানে তার অধীনস্থ আঞ্চলিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল অরোরার সফরসঙ্গী আমি হতে পারি না। এটা দেমাগের কথা নয়। এটা প্রটোকলের ব্যাপার।

অন্য উত্তর

"সেনা বাহিনীর নিয়মে আত্মসমর্পন করতে হয় সমপর্যায়ের অফিসারদের মধ্যে, আর ঐ সময় বাংলাদেশের হয়ে সমপ্ররযায়ের কেউ উপস্থিত না থাকায় , ইন্ডিয়ান অরোরা আর পাকিস্থানি নিয়াজী স্বাক্ষর করেন।" বাংলাদেশের সমপ্ররযায়ের আতাউল গণি উসমানি ঐ সময় সিলেট থাকার কারনে ইন্ডিয়ান জগজিত সিং অরোরা স্বাক্ষর করেন মিত্রবাহিনীর পক্ষে।


মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকালীন প্রজন্ম এবং একেবারেই নতুন প্রজন্ম ; যে কাতারেই পড়ুন না কেন, আপনাদের কাছে জানতে চাইছি আপনারা কে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ আর বিজয়কে উপলব্ধি করেন নিজের অন্তরে?

সত্যি কথা, বাচ্চাকালে স্কুলে প্রতিদিন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় সেই ভাবে কিছু অনুভব করতে পারতাম না । "আমার সোনার বাংলা" এইগানটা এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যখন জাতীয় সঙ্গীত গাই বা শুনি তখন মনে হয় গায়ের লোভকূপগুলোকে অন্যভাবে অনুভব করি আমরা অনেকেই, কারন আমরা এই দেশকে ভালোবাসি । একটা গান, একটা পতাকা, একটা শাপলা ফুল, ছোট্ট দোয়েল পাখি যে কত দামি এখন বুঝতে পারি । কারন এখন জানি কিভাবে এই সব অর্জন করেছি আমরা । প্রতিদিনের খবরের কাজের প্রথম পেজের দেশের হাজারটা মন খারাপ করে দেয়া খবর দেখার পরও হতাশ না হওয়ার কারন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস । আমার মুক্তিযুদ্ধকে জানার মাধ্যম ছিল মুক্তিযুদ্ধের বই আর কিছু প্রামান্যচিত্র । আমার মুক্তিযোদ্ধা চাচার কাছ থেকে গেরিলা যুদ্ধের কাহিনী শোনা আর দাদীর একাত্তরে গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর ভয়াবহ নির্মমতার স্মৃতিচারন থেকে । অনেকেই হয়তো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানে কিন্তু জানাই যথেষ্ট না, এটা অনুভবের আর উপলব্ধিরও ব্যাপার । এই দেশের রক্তে মাটির পবিত্রতা যদি সবাই অনুভব করতে পারতো তাহলে প্রতিদিনের খবরের কাগজের প্রথম পেজ দেখে আমাদের মন খারাপ হয়ে যেত না । কয়েক বছর আগে আবদুল্লাহ আবু সাইদ স্যারের একটা সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম, দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের সব থেকে ভালো মাধ্যম নিজের দায়িত্বকে যথাযথভাবে পালন করা । যে ছাত্র সে ভালোভাবে পড়ালেখা করবে, যে ব্যবসায়ী সে সততার সাথে নিজের ব্যবসা করবে । এটা তাহলেই আমাদের এই লাল সবুজ পতাকা আরো উপরে উঠবে ।




সূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি, বিভিন্ন পত্রিকা ও ব্লগ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ