জাতীয় চার নেতাকে কেন জাতীয় নেতা বলা হয়?
১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চের পরে যখন বঙ্গবন্ধু কে গ্রেফ্তার করা হয় তার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধে সর্বত্র নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন এই চার নেতা, বঙ্গ বন্ধুর অবর্তমানে এই চার নেতা তার ভূমিকাই পালন করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন দেশ স্বাধিন হওয়ার পরে, অর্থাৎ এই চার নেতাই যুদধকালীন সময়ে মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন, এছাড়া বঙ্গবন্ধু কে হত্যার পরে বঙ্গ বন্ধুর অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিতে তারাই বদ্ধ পরিকর ছিলেন ফলে ৪ ~জনকে একই সময়ে গ্রফ্তোর করা হয় এবং হত্যা করা হয়, এই জন্য এই ৪ জনকে জাতীয় নেতা বলা হয় বলে আমি মনে করি.
জাতীয় চার নেতার পারিবারিক তথ্য ও তাদের রাজনীতি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ মনসুর এবং কামারুজ্জামান এই চারটি নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে উজ্জল।১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে ঘাতকের ব্রাশ ফায়ারে নিহত হন এই মহান নেতারা। স্বাধীন বাংলাদেশের এই চার সূর্যসন্তানদের পারিবারিক তথ্য ও রাজনীতি নিয়ে কিছু কথা।
সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরিবার
বাংলাদেশের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি এবং মুক্তিযুদ্ধকালে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের পাঁচ সন্তানের মধ্যে একমাত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। তার অন্য চার সন্তানের মধ্যে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম ও সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ব্যবসা করছেন, এ ছাড়া দুই মেয়ের কেউ-ই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হননি।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর পর দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও দলীয় কার্যক্রমে দৃশ্যমান সক্রিয় ছিলেন না তিনি।২০০৭ সালে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের সময়ে দলের হাল ধরেন। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন পর পর দুই কাউন্সিল অধিবেশনে। এ সময়ে রাজনীতিবিদদের নিয়ে জনমনে নানা নেতিবাচক মনোভাব থাকলেও আওয়ামী লীগের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ সম্মানের জায়গা তৈরি করতে পেরেছেন তিনি।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম বলেন: জেল হত্যাকাণ্ডের পর তাদের পরিবারের অবস্থা বেশ নাজুক ছিল। তিনি জানান তাদের বরাদ্দকৃত সরকারি বাড়িটির ভাড়া নির্ধারণ করা হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। ভাড়ার পরিমাণ এত বেশি নির্ধারণ করা হয়েছিল যে, তাদের পরিবারের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব ছিল না। নিরুপায় হয়েই মা দুই বোন এক ভাইকে নিয়ে ময়মনসিংহে অবস্থান নিয়েছিলেন।
তাজউদ্দীন আহমদের পরিবার
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ আগাগোড়াই একজন তুখোড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দীন, মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি ও ছেলে তানজীব আহমদ সোহেল তাজ সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তাজউদ্দীনের অন্য দুই মেয়ে নিজেদের রাজনীতিতে জড়াননি। জোহরা তাজউদ্দীন মারা গেছেন ২০১৪ সালে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলে ছত্রভঙ্গ আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিক কাঠামের ওপর দাঁড় করানোর জন্য আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেনাশাসনের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনিই প্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবি করেন এবং প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে মিলাদের আয়োজন করেন।
তাজউদ্দিনের একমাত্র ছেলে তানজীম আহমদ সোহেল তাজ গাজীপুর থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে সংসদ সদস্যপদ এবং মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান। পরবর্তী সময়ে ওই আসনে তার বড় বোন সিমিন হোসেন রিমি উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদেও রিমি নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। জাতীয় চার নেতার অন্য কারও পরিবারের এত সদস্য সক্রিয় এবং আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হননি।
এম মনসুর আলীরের পারিবার
বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর এম মনসুর আলীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তার দুই ছেলে ও এক নাতি রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন। এম মনসুর আলীর তিন ছেলের মধ্যে মোহাম্মদ নাসিম এবং ড. মোহাম্মদ সেলিম এবং নাতি তানভীর শাকিল জয় সংসদ সদস্য হয়েছেন। ড. মোহাম্মদ সেলিম মারা গেছেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৬ সালে সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজীপুর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে কাজীপুরের আসন ছেড়ে দিলে সেখানে তার ভাই ড. মোহাম্মদ সেলিম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনগত কারণে মোহাম্মদ নাসিম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। সেবার তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দশম সংসদ নির্বাচনে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম।
মোহাম্মদ নাসিম জানান রাজনৈতিক জীবনে তার পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই সাধারণ জীবনযাপন করতেন। সারাজীবন দেশের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। তাই তার মৃত্যুর পর তারা অস্বাভাবিক রকমের অভাব-অনটনে পড়ে যায়। তাদের ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা ছিল না। সরকারি বাসভবন ছাড়ার পর ধানমন্ডিতে এক আত্মীয়ের বাসায় থাকতেন। তার বড় ভাই লন্ডন থেকে কিছু টাকা পাঠাতেন, তা দিয়েই তাদের সংসার চলত।
এ এইচ এম কামরুজ্জামানের পারিবার
বাংলাদেশের প্রথম সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামানের ৬ সন্তানের মধ্যে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন শুধু খায়রুজ্জামান লিটন। দুই ভাই এবং চার বোনের মধ্যে লিটন চতুর্থ। এই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মও এরই মধ্যে রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন। তিনি হলেন খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়ে আনিকা সাদিয়া অর্ণা। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গত কমিটির (২০১১-১৫) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক উপ-সম্পাদক ছিলেন।
খায়রুজ্জামান লিটন গত এক যুগ ধরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে পা রাখেন ১৯৮১ সালে। তখন রাজশাহী যুবলীগের একটি ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি পদে আসীন ছিলেন। ১৯৮৬ সালে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৮৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত টানা ২৬ বছর রাজশাহী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর অনুষ্ঠিত সব কাউন্সিলে তার এই পদটি অপরিবর্তিত আছে।
জেল হত্যা দিবস
স্থান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা, বাংলাদেশ
হামলার ধরন হত্যাকাণ্ড
নিহত ৪
তারিখ ৩রা নভেম্বর, ১৯৭৫
জেল হত্যা দিবস আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রতি বছর ৩রা নভেম্বর পালিত হয়। ১৯৭৫ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের চারজন জাতীয় নেতাঃ সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আ হ ম কামারুজ্জামানের হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি স্বরণার্থে এ দিবস পালন করা হয়।
ইতিহাস
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। অভ্যুত্থানকারীরা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের পাল্টা অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হন। মুজিবের হত্যাকারীরা দেশ থেকে নির্বাসিত হওয়ার পূর্বে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।[৩] কতিপয় সেনা কর্মকর্তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আ হ ম কামারুজ্জামানকে গুলি করে এবং সঙ্গিন দিয়ে বিদ্ধ করে হত্যা করে।[৪] এই হত্যাকারীরা পরে বাংলাদেশের দুই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের নিকট থেকে পরোক্ষ সহযোগিতা লাভ করে।
বিচারকার্য
জেলহত্যার প্রায় ২৯ বছর পর এর বিচারকার্য শুরু হয়। ২০০৪ সালের ২০শে অক্টোবর বিচারের রায়ে তিনজন পলাতক সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড, ১২ জন সেনা কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিএনপির চারজন সিনিয়র নেতাসহ পাঁচজনকে খালাস দেওয়া হয়।
২০০৮ সালের ২৮শে আগস্ট বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ জেলহত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছয়জন সামরিক কর্মকর্তাকে খালাস দেয়। খালাসীদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দীন আহমেদকে ২০০৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষ খালাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করে সুপ্রীম কোর্টে আপিল করে।
কখন এবং কেন জাতীয় চার নেতাকে হত্যার সিদ্ধান্ত?
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আজ জেল হত্যা দিবস পালন করেছে। ১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগের চারজন সিনিয়র নেতা - সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে ঢাকার কারাগারে হত্যা করা হয়।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের পরেই তখন এ চারজন নেতা ছিলেন দলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শেখ মুজিবকে হত্যার প্রায় আড়াই মাস পরে কারাগারে এ চার নেতাকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তখন অনেকটা দিশেহারা। চারজন সিনিয়র নেতাসহ অনেকেই কারাগারে এবং অনেকে আত্ন গোপনে ছিলেন। বাকি নেতারা প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্যে নতুন রাস্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের সাথে সমঝোতা করেন। অনেকে আবার রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। তৎকালীন রাজনীতির বিশ্লেষক এবং গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন জেল হত্যাকাণ্ডের সাথে ৩রা নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কিত। কারণ মুজিব হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে সে অভ্যুত্থান আওয়ামী লীগ বা বাকশালের পক্ষে হচ্ছে। কিন্তু খালেদ মোশাররফ এবং তার সমর্থকদের কার্যকলাপ থেকে এ ধরনের কোন প্রমান পাওয়া যায়নি বলে মি: আহমেদ উল্লেখ করেন। মি: আহমেদ বলেন , "ক্ষমতাসীন মোশতাক বা তার সমর্থকরা চাননি যে তাদের বিরোধী আরেকটি শক্তি শাসন ক্ষমতায় পুনর্বহাল হোক। ঐ ধরনের একটা সরকার যদি হতো তাহলে জেলে থাকা সে চারজন ছিলেন সম্ভাব্য নেতা।" তিনি বলেন এ সম্ভাবনা থেকে জেল হত্যাকাণ্ড হতে পারে। পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর থেকেই হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের আশংকায় ছিল। সেনাবাহিনীর মধ্যে ছিল এক ধরনের বিশৃঙ্খলা। সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। একদিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং অন্যদিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ। তখন ঢাকা সেনানিবাসে মেজর পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন বর্তমানে বিগ্রেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি এসব ঘটনা প্রবাহ বেশ কাছ থেকে দেখেছেন। তার সে অভিজ্ঞতা নিয়ে মি: হোসেন একটি বই লিখেছেন 'বাংলাদেশ রক্তাক্ত অধ্যায়: ১৯৭৫-৮১' শিরোনামে।
শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা তখন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহেমদকে পরিচালনা করছিলেন। মি: হোসেন বলেন বঙ্গভবনের থাকা সেনা কর্মকর্তাদের সাথে একটা সংঘাত চলছিল সেনানিবাসের উর্ধ্বতন কিছু সেনা কর্মকর্তাদের সাথে।
মি: হোসেন বলেন, " খন্দকার মোশতাক যে বেশিদিন ওখানে টিকবেন না, এটাও ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সিনিয়র অফিসারদের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছিল। তখন আবার সিনিয়র অফিসারদের মধ্যেও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল।" শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ধারনা করেছিলেন যে কোন পাল্টা অভ্যুত্থান হলে সেটি আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবে। সে ধরনের পরিস্থিতি হলে কী করতে হবে সে বিষয়ে মুজিব হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা কিছুটা ভেবেও রেখেছিলেন। মি: হোসেন বলেন, "ঐ ধরনের ক্যু হলে তখনকার আওয়ামী লীগে যাতে কোন ধরনের লিডারশিপ না থাকে সেটাই তারা বোধ হয় নিশ্চিত করেছিল।" হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ভেবেছিল যদি সে চারজন রাজনীতিবিদকে যদি হত্যা করা হয় তাহলে পাল্টা অভ্যুত্থান হলেও সেটি রাজনৈতিক সমর্থন পাবেনা। খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান যে আওয়ামী লীগের সমর্থনে হবে এমন ধারনা সঠিক ছিলনা বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু তারপরেও সে ধারনার ভিত্তিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় চারজন নেতাদের হত্যা করা হয় বলে বিশ্লেষকরা বলছেন। যদিও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে যে অভ্যুত্থান হয়েছিল সেটির সাথে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক বা সমর্থনের বিষয়টি পরিষ্কার নয়।
স্বাধীনতার ঘোষণা
টেক্সাসে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নথি সংগ্রাহক মাহবুবুর রহমান জালাল বলেন, “বিভিন্ন সূত্র ও দলিল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই প্রমাণিত হয় যে, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যা ছিল তাঁর বা অন্য কারো হয়ে ঘোষণা দেয়ার অনেক পূর্বে।[২৮] ২৫ মার্চে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক ভেঙে গেলে ইয়াহিয়া গোপনে ইসলামাবাদে ফিরে যান। এবং গণহত্যা চালানোর পর[২৯] পাকিস্তানি সেনারা সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুসহ তার পাঁচ বিশ্বস্ত সহকারীকে গ্রেপ্তার করে। [৩০] গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে যান। [৩১] মূল ঘোষণার অনুবাদ নিম্নরূপঃ
এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।
বিভিন্ন মাধ্যমে ঘোষণাপত্র
২৫-শে মার্চ থেকে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত সকল সাংবাদিককে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ২ দিন যাবৎ অবরুদ্ধ করে রাখে।[৩২] স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র [টীকা ১] সেখান থেকে ঘোষণা হয় যে “শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে সাড়ে সাত কোটি জনগণকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছেন”। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে স্বাধীনতার মূল ঘোষক কে ছিলেন তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে ১৯৮২ সালে সরকারিভাবে একটি ইতিহাস পুস্তক প্রকাশিত হয় যাতে ৩টি বিষয় উপস্থাপিত হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান একটি ঘোষণাপত্র লিখেন ২৫ মার্চ মাঝরাত কিংবা ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে।
শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাপত্রটি ২৬ তারিখে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। কিন্তু সীমিতসংখ্যক মানুষ সেই সম্প্রচারটি শুনেছিল।
পূর্ব বাংলা রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হয়ে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করে, ফলে বিশ্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে জানতে পারে। ঘোষণাটি ছিল নিম্নরূপঃ [৩৪]
On behalf of our great national leader, supreme commander of Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman do hereby proclaim the independence of Bangladesh. It is further proclaimed that Sheikh Mujibur Rahman is sole leader of elected representatives of 75 million people of Bangladesh. I therefore appeal on behalf of our great leader Sheikh Mujibur Rahman to the government of all democratic countries of the world specially big world part and neighboring countries to take effective steps to stop immediately. The awful genocide that has been carried on by the army of occupation from Pakistan. The legally elected representatives of the majority of the people as repressionist, it is cruel joke and contradiction in terms which should be fool none. The guiding principle of a new step will be first neutrality, second peace and third friendship to all and anonymity to none. ─ May Allah help us, Jai Bangla.
অনুবাদঃ
আমাদের মহান নেতা, বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। এটি আরও ঘোষণা করা হচ্ছে যে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একমাত্র নেতা হচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান। আমি সেই কারণে আমাদের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ে বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিশেষ করে বৃহৎ বিশ্ব ও প্রতিবেশীদের কাছে কার্যকারী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হামলার ফলে ভয়াবহ গণহত্যা শুরু হয়েছে। অধিকাংশ জনগণের বৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিপীড়নকারী, এটি একটি ক্রূর কৌতুক ও মিথ্যা অপবাদ যার কাউকে বোকা বানানো উচিত নয়। বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রধান পদক্ষেপগুলোর মধ্যে প্রথম হতে হবে নিরপেক্ষতা, দ্বিতীয় শান্তি এং তৃতীয় সকলের সাথে বন্ধুভাবপন্ন ও কারো সম্বন্ধে অজ্ঞানতা নয়। ─ আল্লাহ্ সহায় হোক, জয় বাংলা।

0 মন্তব্যসমূহ