২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামের গণহত্যাযজ্ঞ।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে ঘুমন্ত বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একটি জনযুদ্ধের আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। পঁচিশে মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ হত্যা করে। গ্রেফতার করা হয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙ্গালীর তৎকালীন প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গ্রেফতারের পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পরিকল্গপিত গণহত্যার মুখে সারাদেশে শুরু হয়ে যায় প্রতিরোধযুদ্ধ; জীবন বাঁচাতে প্রায় ১ কোটি মানুষ পার্শ্ববর্তী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, সামরিক বাহিনীর বাঙ্গালী সদস্য এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ দেশকে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর কব্জা থেকে মুক্ত করতে কয়েক মাসের মধ্যে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী সারাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সাহায্য লাভ করে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে যখন পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর পতন আনিবার্য হয়ে ওঠে, তখন পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তান ৯৩,০০০ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এরই মাধ্যমে নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান হয়; প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙ্গালী জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।শেষ হয় ১৯৭১ সালে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্র আত্মপ্রকাশ করে।
২৬ শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। আজ বৃহস্পতিবার ২০১৫ স্বাধীনতা দিবসের ৪৪
বছরপুর্তি। ১৯৭১ সালের রোজ বৃহস্পতিবার রাত ১.৩০মিনিট অর্থাৎ ২৫ শে মার্চের রাত্রে
পাকিস্তানী আর্মিরা যখন ক্রেকডাউন করলো এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করল তখন ২৫শে
মার্চ রাত বারোটা থেকে ২৬শে মার্চ রাত একটা ত্রিশ এর মধ্যবর্তী সময়ে জাতির পিতা
স্বাধীনতার ঘোষণা করলেন, এর জন্যই ২৬ শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস | এই
বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর একটি ডকুমেন্টস আছে “দিস মে বী মাই লাস্ট ম্যাসেজ”নামে |
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যখন পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর বর্বরের মতো ঘৃণ্য হামলা চালায়, সে রাতে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় বাঙালি নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বন্দী হন। মার্চ এর ২৬ তারিখের প্রথম প্রহরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ চলে যান আত্মগোপনে। জনগণ তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বর আক্রমণের পর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মেজর জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে বিদ্রোহ করেন এবং ২৬শে মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। তারপর থেকে আজো ২৬শে মার্চ এই দিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালিত হয়।১৯৭১ সালে এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে যা নয় মাস স্থায়ী হয়। ততকালীন সেনাবাহিনী সামনের সারি্তে থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। তাঁরা বেশ কয়েকদিন চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অভিযানের মুখে কৌশলগতভাবে তাঁরা সীমান্ত অতিক্রম করেন।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজীব নগর থেকে ” স্বাধীনতার ঘোষণা” পত্র পাঠ করা হয় এবং কোন প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন তা পরিষ্কার ভাবে বিশ্ববাসির কাছে তুলে ধরা হয় | ওই ঘোষনা পত্র অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি করে বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রীসভা শপথ গ্রহণ করেন এবং ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী পর্যন্ত তারা সরকার পরিচালনা করেন।কত যে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ প্রাণ দিয়ে আমাদের জন্য রেখে গেছে সাধের স্বাধীনতা – তার কোনও হিসেবও করা সম্ভব না। তাদের ঋণ অপরিশোধ্য। তাদেরই রক্তধারার ফলে লক্ষ শহীদ যোদ্ধা ভায়ের-বোনের আত্মত্যাগের নাম – বাংলাদেশ।
৭ই মার্চের ভাষন
সাতই মার্চের ভাষণ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই মার্চ ঢাকার
রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) অনুষ্ঠিত জনসভায়
শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত এক ঐতিহাসিক ভাষণ। ১৮ মিনিট স্থায়ী[১] এই ভাষণে
তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের(বর্তমানে বাংলাদেশ) বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা
সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। এই ভাষণের একটি লিখিত ভাষ্য অচিরেই
বিতরণ করা হয়েছিল। এটি তাজউদ্দীন আহমদ কর্তৃক কিছু পরিমার্জিত হয়েছিল।
পরিমার্জনার মূল উদ্দেশ্য ছিল সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের
কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীটির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা।[১] ১২টি ভাষায় ভাষণটি
অনুবাদ করা হয়৷ নিউজউইক ম্যাগাজিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে
রাজনীতির কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০১৭ সালের ৩০ শে অক্টোবর ইউনেস্কো এই ভাষণকে
ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[২]
পটভূমি
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী এই দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে। প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, যে-কোনভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে ১লা মার্চ এই অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই পটভূমিতেই ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হয়; পুরো ময়দান পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। এই জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন।
ভাষণের মূল কয়েকটি দিক:
সামগ্রিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা;
নিজ ভূমিকা ও অবস্থান ব্যাখ্যা;
পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনীতিকদের ভূমিকার ওপর আলোকপাত;
সামরিক আইন প্রত্যাহারের আহ্বান;
অত্যাচার ও সামরিক আগ্রসন মোকাবিলার হুমকি;
দাবী আদায় না-হওয়া পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে সার্বিক
হরতাল চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা;
নিগ্রহ ও আক্রমণ প্রতিরোধের আহ্বান।
এ ধরনের দলিলগুলো যে 'মেমোরি অব দা ওয়ার্ল্ড
ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে' অন্তর্ভুক্ত করা হয় সে তালিকায়
এ ভাষণটিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সারা বিশ্ব থেকে আসা
প্রস্তাবগুলো দু বছর ধরে নানা পর্যালোচনার পর উপদেষ্টা কমিটি তাদের মনোনয়ন
চূড়ান্ত করে বলে ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত এর মাধ্যমে বিশ্ব
জুড়ে যেসব তথ্যভিত্তিক ঐতিহ্য রয়েছে সেগুলোকে সংরক্ষণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের
যাতে তা থেকে উপকৃত হতে পারে সে লক্ষ্যেই এ তালিকা প্রণয়ন করে ইউনেস্কো। ইউনেস্কো
জানিয়েছে, তাদের
মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (এমওডব্লিউ) কর্মসূচির উপদেষ্টা কমিটি ৭ মার্চের ভাষণসহ
মোট ৭৮টি দলিলকে 'মেমোরি অফ দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল
রেজিস্টারে' যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। ওদিকে বাংলাদেশের
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে 'বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ-এ
অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ৩০শে অক্টোবর এ
সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, "এখন বিশ্ব আরও বেশি করে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও
গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে"। মেমোরি অব দা ওয়ার্ল্ড
ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে এখন পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সব মহাদেশ থেকে ৪২৭টি
গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস বা কালেকশন। ইউনেস্কোর যে উপদেষ্টা কমিটি এ মনোনয়ন
দিয়েছে সেই কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ন্যাশনাল
আর্কাইভসের মহাপরিচালক ড: আব্দুল্লাহ আলরাইসি। প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে ওই
বৈঠকে তিনি ছাড়াও উপদেষ্টা কমিটির আরও ১৪ জন সদস্য ছিলেন যারা সবাই বিশ্বখ্যাত
বিশেষজ্ঞ ।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক
সংস্থা ইউনেস্কো প্যারিসে অনুষ্ঠিত এর দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ৩০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখ
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল’
হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তা সংস্থাটির ‘মেমোরি অব
দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ অন্তর্ভুক্ত করেছে।
১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি আন্তর্জাতিক
উপদেষ্টা-বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক দু’বছর ধরে প্রামাণ্য দালিলিক
যাচাই-বাছাই শেষে ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের সম্মতিক্রমে এটি সংস্থার নির্বাহী কমিটি
কর্তৃক চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। দীর্ঘ ৪৬ বছর পর হলেও জাতিসংঘের মতো বিশ্ব সংস্থার এ
সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
এর ফলে বাঙালির ইতিহাসের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রণোদনা সৃষ্টিকারী ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ মানবজাতির
মূল্যবান ও ঐতিহ্যপূর্ণ সম্পদ হিসেবে স্বীকৃত ও গৃহীত হল। স্বাধীনতার জন্য
আত্মোৎসর্গকৃত ৩০ লাখ শহীদ আর সম্ভ্রম হারানো কয়েক লাখ মা-বোনসহ আমাদের সবার জন্য
এটি এক মহা-আনন্দ ও বিরল সম্মানের বিষয়।
স্মর্তব্য, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা
শহীদ দিবসকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ফলে এখন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর নিজ
ভাষার অধিকার সংরক্ষণের প্রতীক হিসেবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান ওই ভাষা আন্দোলনে শুধু সংগঠকের ভূমিকাই পালন করেননি, তিনি
ছিলেন এ আন্দোলনের প্রথম কারাবন্দিদের অন্যতম। ১৯৯২ সাল থেকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য সম্পদের স্বীকৃতি ও
সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছে। এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বকোভার কথায়,
‘আমি গভীর ও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দালিলিক
ঐতিহ্য ও স্মৃতি সংরক্ষণে এ কর্মসূচি পরিচালিত হওয়া উচিত, যাতে
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সংলাপ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা,
পারস্পরিক বোঝাপড়া ও শান্তির চেতনা লালন করতে পারে।’ যুদ্ধবিগ্রহ, লুণ্ঠন, অপরিকল্পিত
উন্নয়ন ইত্যাদি কারণে দেশে-দেশে বিশ্ব ঐতিহ্য বিনষ্ট বা ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে।
আবার সম্পদের অপ্রতুলতার কারণেও যথাযথভাবে
তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণেও তা বিনষ্ট বা বিস্মৃতির অতল গহ্বরে
হারিয়ে যাচ্ছে। এসব দিক বিবেচনায় ইউনেস্কোর এ কর্মসূচির গুরুত্ব অপরিসীম।
গ্রিক নগররাষ্ট্র এথেন্সের রাষ্ট্রনায়ক
পেরিক্লিসের অপর এক নগররাষ্ট্র স্পার্টার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত স্বদেশীয় সৈন্য ও
সাধারণ মানুষের স্মরণে প্রদত্ত ভাষণ (৪৩১ খ্রিস্টপূর্ব) থেকে শুরু করে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের ১৯৮৭ সালে বার্লিনে দুই জার্মানির
মধ্যকার বিভক্তির দেয়াল (বার্লিন ওয়াল) ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করার আহ্বানসংবলিত ভাষণ
পর্যন্ত আড়াই হাজার বছরের বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী ৪১ জন
সামরিক-বেসামরিক জাতীয় বীরের বিখ্যাত ভাষণ নিয়ে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ Jacob F Field, We Shall Fight on The Beaches : The
Speeches That Inspired History শিরোনামে একটি গ্রন্থ সংকলন করেন,
যা ২০১৩ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে অন্যদের মধ্যে
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট (মেসিডোনিয়া, প্রাচীন গ্রিস), জুলিয়াস সিজার (রোম), অলিভার ক্রমওয়েল (ইংল্যান্ড),
জর্জ ওয়াশিংটন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), নেপোলিয়ন
বোনাপার্ট (ফ্রান্স), জোসেফ গ্যারিবোল্ডি (ইতালি), আব্রাহাম লিংকন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), ভ্লাদিমির
লেনিন (রাশিয়া), উইড্রো উইলসন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র),
উইনস্টন চার্চিল (যুক্তরাজ্য), ফ্রাঙ্কলিন
রুজভেল্ট (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), চার্লস দ্য গল (ফ্রান্স),
মাও সেতুং (গণচীন), হো চি মিন (ভিয়েতনাম)
প্রমুখ নেতার বিখ্যাত ভাষণের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া, বিবিসি, বিভিন্ন পত্রিকা ও ব্লগ
0 মন্তব্যসমূহ